মোহাম্মদ সেলিম *

সড়ক সম্প্রসারণের প্রায় চার বছর পরও ঝুঁকিপূর্ণ বড় বড় রেইনট্রি ও কড়ইগাছগুলো সরানো হয়নি। মরা- জীবিত অর্ধশতাধিক এসব গাছের ডালপালার নিচ দিয়ে প্রতিদিন হাজারো যাত্রীবাহী যানবাহন ও পথচারি চলাচল করে।
এমন বিপদজ্জনক চিত্র চট্টগ্রাম পাহাড়তলিস্থ আমবাগান সড়ক। সড়কের উপর বড় বড় গাছ রেখেই সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজ করা হয়েছে। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন ও পথচারিরা। এসব গাছের কারণে মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনায় কবলিত হচ্ছে যানবাহন। ঝুঁকিপূর্ণ এসব স্থানে দেয়া হয়নি কোনো সতর্কীকরণ নামফলকও ।
সড়কের অনেকটা অংশ দখল করে থাকা মরা গাছ ও সড়কের উপরে হেলেপড়া গাছের ঢালপালা কালবৈশাখী ঝড়ো হাওয়ায় ধসে পড়ে যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড়ধরনের প্রাণহানির ঘটনা। অতীতে ছোটখাটো এমন হতাহতের ঘটনা ঘটলেও সংশ্লিষ্ট কোনো প্রশাসনের এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই।

বাংলাদেশ রেলওয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন এ ব্যস্ততম সড়কটি প্রায় চার বছর আগেই সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ।
ব্যস্ততম সড়কের উপর ঝুঁকিপূর্ণ গাছ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মো. সাইফুল ইসলাম চাটগাঁর বাণীকে বলেন, পাহাড়তলীর আমবাগান সড়কটি একসময় রেলওয়ের ছিলো। চারবছর আগে সড়কটি সম্প্রসারণের মাধ্যমে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। তাই গাছগুলো কাটা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদের।
আমির আলী নামে এক সিএনজি চালক জানান, এ সড়কে প্রথম আমি দুইবছর আগে গাড়ি নিয়ে এসে সেদিনই দুর্ঘটনায় পড়তে যাচ্ছিলান। ভাগ্যক্রমে অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পান বলেও তিনি জানান।
অলঙ্কার টু কোতোয়ালী মোড় চলাচলকারী পিকআপ চালক জসিম উদ্দীন জানান, এ সড়কে প্রতিদিনই ৬/৭বার গাড়ি চালাতে হয়। প্রতিবারই এক আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। রাস্তার পাশের বিশাল অংশ জুড়ে আছে বড়বড় গাছ ও গাছের ঢালপালা হেলে পড়েছে সড়কের উপর। রাস্তার পাশে আছে বৈদ্যুতিক খুটিও। কয়েকটি জায়গায় যে সব মরাগাছ ও ডালপালা আছে সেগুলো বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় ভেঙ্গে পড়তে পারে আমাদের মাথার ওপর।
আমবাগান এলাকার এক ব্যবসায়ী ক্ষোভের সাথে বলেন, রাস্তার উপর গাছ মরে দাঁড়িয়ে আছে দেড়-দুই বছর আগে, দেখার কেউ নেই। এসব গাছ ও বিদ্যুতের পিলারের কারণে প্রায় সময় এখানে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। ঝুঁকিপূর্ণ গাছ ও গাছের ডাল ভেঙ্গে অতীতে মানুষ মারাও গেছে। স্থানীয় ভুক্তভোগি এ ব্যবসায়ী আরও বলেন, ছোটখাটো দুর্ঘটনা কারো নজরে পড়েনা, বড়ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়া প্রশাসনের টনক নড়বে না বলে মনে হয়।
পাহাড়তলি আমবাগান সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ গাছ নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ শাহীন-উল ইসলাম চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি এ প্রসঙ্গে কিছু বলতে অপরাগতা প্রকাশ করে নির্বাহী প্রকৌশলী (পুরকৌশল) জসীম উদ্দিন এর সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু নির্বাহী প্রকৌশলী (পুরকৌশল) জসীম উদ্দিন এর মোবাইলে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
২০১১ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুন বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে পাহাড়তলী রেলওয়ে ওয়ার্কশপের সামনে সীতাকুণ্ড থেকে একটি প্রাইভেটকারে চট্টগ্রাম শহরে আসার সময় ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রেইনট্রি গাছের একটি বড় ডাল ওই কারের ওপর ভেঙে পড়ে। এতে কারযাত্রী আব্দুল হান্নান (৩৫) নিহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে সারাজীবনের জন্যে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন আরো দুই যাত্রী।